যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়নের শুড়া গ্রামের দিনমজুর মনতাজ আলীর মেয়ে রুমানা আক্তার রুমা (২০) মানসিক রোগী হয়ে এক মাস ধরে শিকলবন্দি। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না হতদরিদ্র বাবা। এই অবস্থায় এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বাবা মনতাজ আলীসহ পরিবারের লোকজন।
রুমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালের মার্চে শার্শা উপজেলায় বিয়ে হয় রুমার। বিয়ের পর ভালোই চলছিল সংসার। দেড় বছর সংসার করার পর হঠাৎ রুমার মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। তখন তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। ওই সময় তারা বলেছিলেন রুমা পাগল হয়ে গেছে। ভালোভাবে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হলে তারা এসে নিয়ে যাবেন। এরপর তারা আর কোনো খোঁজ নেননি। তারপর থেকে রুমার মানসিক সমস্যাও আরও বেড়ে যায়।
স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মনতাজ আলী। তার একার আয় দিয়ে সংসার চলে না। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই আছে। অর্থের অভাবে মেয়ের চিকিৎসা করতে পারছেন না তিনি। নিজস্ব কোনো জায়গাজমিও নেই। পরের জমিতে কোনোভাবে মাটির একটা ঘর করে বসবাস করেন। তিনি নিজেও প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাঝে মধ্যে শরীর ভালো থাকলে দিনমজুরি করে চাল-ডাল কেনেন।
মনতাজ আলী জাগো নিউজকে বলেন, তার মেয়ের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে আবেদন করছেন। তাতে যে সহযোগিতা পেয়েছেন তা দিয়ে মেয়ের চিকিৎসা করানো অসম্ভব। ইচ্ছা থাকলেও ডাক্তার দেখাতে পারছেন না।
রুমার মা সোনাভান বিবি বলেন, আমরা একটি মাটির ঘরে পরিবারের পাঁচজন বসবাস করি। আমি সারাদিন লোকের বাড়ি কাজ করে কোনোরকম সংসার চালাই। স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। তবে প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকেন। তখন কাজ করতে পারেন না। তিনবেলা ঠিকমতো খাওয়াই হয় না। এই অবস্থায় মেয়ের চিকিৎসা কী দিয়ে করবো?
মামা অলিয়ার রহমান বলেন, রুমারা যে ঘরে থাকেন তা মাটির তৈরি। চালে টালি দেওয়া। সেই টালিতে ইট মেরে ভেঙে দিচ্ছে রুমা। অপরিচিত লোকজন দেখলে ইট মারছে। আবার ছোট বাচ্চাদের কোলে নিয়ে আদর করছে। কোনো উপায় না পেয়ে মেয়েটির পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। মাঝে মধ্যে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুমি পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাজার থেকে কিছু টাকা উঠিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। তারা বলেছেন মানসিক ডাক্তার দেখাতে খুলনা বা পাবনাতে নিতে হবে। যে টাকা উঠানো হয়েছে ওই টাকা দিয়েতো কিছুই হয়নি। এ এলাকার লোকজন গরিব। তাই তারাও ঠিকমতো টাকা দিতে পারছেন না। আমরা চাই সরকারিভাবে মেয়েটির চিকিৎসা করানো হোক।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মোমিনুর রহমান বলেন, মনতাজ আলীর পরিবার অসহায় এটা আমার জানা আছে। কিন্তু তার মেয়ে রুমার বিষয়টি সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পারি। আমি বিষয়টি দেখবো এবং তার চিকিৎসার জন্য সাধ্যমত সহযোগিতা করবো।
ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারা খাতুন বলেন, খোঁজ নিয়ে মেয়েটির পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।